নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার এক সাধারণ রিকশাচালকের ছেলে আশিক আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে হয়ে উঠেছেন এক অনুপ্রেরণার নাম। কখনও টিকটক, কখনও ফেসবুক বা ইউটিউবে নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি করে তিনি অর্জন করেছেন লাখো ভক্ত-অনুসারী। সেইসাথে বদলে দিয়েছেন নিজের এবং পরিবারের জীবনের গতিপথ।
আশিকের বাবা একজন পেশাদার রিকশাচালক। অভাব-অনটনের সংসারে কখনও দুবেলা খাবার জোটানোও ছিলো কঠিন। এমন বাস্তবতায় পরিবারের হাল ধরার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন আশিক। কনটেন্ট তৈরি করে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলে পরিবারের খরচ।
সম্প্রতি আশিক তার বাবাকে উপহার দিয়েছেন একটি নতুন অটোরিকশা। কারণ তার বাবার আগের রিকশাটি ছিলো পুরনো, পেডেল চালিত—চালাতে কষ্ট হতো। বাবার সেই কষ্ট আর সহ্য হয়নি ছেলের। ইউটিউব ও ফেসবুকের আয় থেকেই তিনি বাবার জন্য কেনেন একটি মোটরচালিত অটোরিকশা, যা পেয়ে খুশিতে চোখে পানি এসে যায় আশিকের বাবার।
তবে এই সাফল্যের পথ মোটেও সহজ ছিল না। আশিককে শুনতে হয়েছে তির্যক মন্তব্য, কটাক্ষ, অপমান। কেউ বলতো, “রিকশাওয়ালার ছেলে ফেসবুকে ভিডিও বানায়, ভাব নেয়!” আবার কেউ বলতো, “ভাত জোটে না, চলে এসেছে ভিডিও বানাতে!” কিন্তু আশিক দমে যাননি। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল, মোবাইল ক্যামেরার সামনেই গড়ে তুলবেন নিজের ভবিষ্যৎ। আজ সেই স্বপ্ন তিনি বাস্তব করেছেন।
শুধু বাবার অটোরিকশা নয়—অনলাইনের আয় দিয়ে আশিক তার ছোট ভাইকে পাঠিয়েছেন দেশের বাইরে, নিজেও সোনারগাঁওয়ে খুলেছেন একটি ফ্যাশনের দোকান। এলাকাবাসীর মুখে মুখে এখন আশিকের প্রশংসা। এক সময় যাকে কটাক্ষ করা হতো, আজ তার উদাহরণ দেওয়া হয় তরুণ প্রজন্মের সামনে।
আশিক প্রমাণ করেছেন, স্বপ্ন বড় হলে পেশা বা পারিবারিক অবস্থা কোনো বাধা নয়। ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম আর ধৈর্য থাকলে একজন রিকশাওয়ালার ছেলেও হয়ে উঠতে পারে লাখো মানুষের অনুপ্রেরণা।